স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে কে বাঁচিতে চায় (ব্যাকগ্রাউন্ডে শোনা যাবে, কেউ চিৎকার করে বলছে, পাত্রী চাই!!!)
দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পড়িতে চায় হে কে পড়িতে চায় (এখানে শোনা যাবে, পাত্র চাই) ।
আমার খুব কাছের এক বন্ধু যখন বিয়ের প্রাথমিক হাতকড়া (জুয়েলারী পরিভাষায় এটাকে আংটি বলা হয়) পড়ল, এটাই ছিল আমার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া। যে বন্ধুকে যখন ইচ্ছা আড্ডা দেয়ার জন্য পাওয়া যেত, ঘুরতে যাবার জন্য সঙ্গী করা যেত, কিছু খাওয়াতে বললে যে বলত "চলে আয়", সেই বন্ধুকে আর ইচ্ছামতন পাওয়া যাবেনা, ভাবতে কষ্টা লাগছে বটে। এখন চাইলেই আর গভীর রাতে ফোন দিয়ে আড্ডা দেয়া যাবে না (কপোত কপোতীদের ডিসটার্ব না করি), উইকএন্ডে সাত সকালে ফোন করে বিরক্ত করা যাবে না (আবারও, ডিসটার্ব না করি, ঘুমাইতে দেই), হঠাৎ করে কিছু খাওয়াতে বলা যাবে না ("নিজেরাই চলতে পারি না, আবার তোরা আইছস খাইতে")।
আমার বন্ধুটাও আগে থেকেই বলে রেখেছে, সংসার শুরু করলে ওটার প্রায়োরিটি থাকবে সবার উপর (হবু বউ আগেই এই শর্ত দিয়েছে)। বন্ধু বান্ধব তখন বাদ ("আজেবাজে ছেলেদের সাথে মিশবানা কিন্তু")। আমি আজীবন ব্যাচেলর, বন্ধু বান্ধব আর সংসারের বন্ধু বৎসল আত্নীয় স্বজন ছাড়া আমার আর কখনোই কেউ ছিল না। নিজের সংসার কি এমন অভিনব জিনিস, যে হঠাৎ করে তাকে সবার উপরে স্থান দিতে হবে, দীর্ঘদিনের বন্ধুদের দিতে হবে নতুন সংসারের নিচের স্থান, কোন ভাবেই বুঝতে পারলাম না, মানতে পারলাম না (কেউ কেউ অবশ্য মেনে নেয় বা মেনে নিতে বাধ্য হয়)।
আমার বারবার খালি মনে হলো, এই সংসার নামের বন্ধন (ইংরেজীতে, জেলখানা), এর কিবা দরকার। এইতো ভালো আছি। স্বাধীন আছি। নিজের ইচ্ছে হলে রেঁধে খাই। ইচ্ছে না হলে হোম ডেলিভারী পিজার অর্ডার দেই। ইচ্ছে হলে বাজার করি, ইচ্ছে না হলে জমানো টুনার ক্যানের ভান্ডার থেকে দুটো নিয়েনি। নিজের ইচ্ছের জগতে আমিই সিংহ, সেই ইচ্ছের জগতে কোন জাগতিক নিয়ম আর রীতির শাসন একেবারেই অচল।
তবে মাঝে মাঝে যখন একা লাগে, তখন মনে হয়, স্বাধীনতা একটু বিসর্জন দিয়ে যদি একাকীত্বটা কমানো যায়, কেমন হয়? বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো কমিয়ে দেব, তার বদলে বউর সাথে গল্প বা প্রেমালাম, অথবা ঝগড়া এবং ফুলদানি ছোড়াছুড়ি। এক গাদা বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া কমিয়ে দেব, তার বদলে বউ নিয়ে হানিমুন করে বেড়াব। সময় নষ্ট করা হাবিজাবি সব কাজ (ছবি দেখা, গান শোনা, লেখালেখি (এইখানটায় হাসবেন না প্লিজ) ) বন্ধ করে গঠনমূলক কাজে (বাজার করা, মশলা বাটা, বাঙ্গালী পরিবারগুলোকে দাওয়াত দেয়া ও দাওয়াত নেয়া) মনযোগ দেব। বিনিময়ে পাব বউর ভালবাসা (তা না পেলেও বউ উপলক্ষে ভাল বাসা অন্তত নেয়া হবে) । কিন্তু ভয় হয়, যতটা বিসর্জন দেব (উপরের লিস্টের আইটেমগুলোর সাথে সতীত্বটাও বিসর্জন দিচ্ছি), ততটা কি পাব (সতীত্ব ফিরে পাচ্ছি না বাই অ্যানি চান্স, তবে আমার বউ কি অন্তত: ওটা আমার কাছে বিসর্জন দিচ্ছে, নাকি আগেই ,,,, ছি ছি)? শেষে যদি একূল ওকূল দুকূল হারিয়ে অথৈ দরিয়াতে হাল ধরতে না পারি?
শেষমেষ মনে হয়, এইতো বেশ ভাল আছি।
"চলছে গাড়ি যাত্রাবাড়ী, গাইতে গাইতে গল্পে গল্পে
যাক চলে যাক পুরোটা পথ, নাইবে পেলাম দেখা পরীর।
হোক যত হোক লোকাল গাড়ি, যতটাই বা লাগুক সময়,
এই পথেরই নেশায় বুঁদে, খেতা পুড়ি শ্বশুর বাড়ির।"
(
কবিতাটার একটা নতুন ভার্সন চিন্তা করলাম। পোলাপান কি কও?
"চলছে গাড়ি যাত্রাবাড়ী, গাইতে গাইতে গল্পে গল্পে
যাক চলে যাক পুরোটা পথ, নাইবা পেলাম সঙ্গিসাথী।
চাইনা কোন স্বপ্নপুরী, কাতর করেনা কল্পনারী
যাদের করে, তাদের বলি, যা তোরা সব শ্বশুড়বাড়ি।"
)
আমার আপত্তি নেই। এই বেশ ভাল আছি। "চেঞ্জ ইউ ক্যান বিলিভ ইন" এর স্বপ্ন আমাকে এখনও কেউ দেখাতে পারেনি।
বি:দ্র: ১ এই লেখার সাথে বাস্তবের তেমন সম্পর্ক নাই। কিছু চরিত্রের এবং ঘটনার সময়কালের অস্তিত্ব থাকলেও চিন্তা ভাবনটা মূলত মজা করার জন্য।
বি:দ্র: ২ সহযোদ্ধা হারিয়ে মন পুরা বিলা। মেজাজ খারাপ করে এই লেখা লিখলাম। কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আপাতত: কষ্ট চেপে রাখুন। আমার মন মেজাজ ঠিক হলে ক্ষমা চেয়ে নিতেও পারি।
বি:দ্র: ৩ সবকিছুর পরও, আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুবলয়ে সর্বপ্রথম সফল ভালবাসার যুদ্ধজয়ীর জন্য বিজয়মাল্য দিতে কার্পন্যবোধ করছি না। আফটার অল, নিজে পরাজিত সৈনিক বলেই বিজয়ের মর্মটা আমার ভালই জানা। ভালবাসা অমর হোক, আর আমার এসব ছাইপাস লেখা নিপাত যাক।
Saturday, October 11, 2008
Subscribe to:
Posts (Atom)