Sunday, September 16, 2007

দুই বছর (২)

প্লেন থেকে নেমে লাগেজ আনতে গেলাম। ১৫ মিনিট পর বুঝলাম, লাগেজ একট খোয়া গেছে। একেতো জীবনে প্রথম বাইরে আসা, তার উপর এই লাগেজ হারানো। টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছি। একটু পর টের পেলাম, লাগেজ যা একটা এসেছে, সেটার চাকা গেছে ভেঙ্গে। সেটা কোন মতে এক হাতে নিয়ে টেনে হেঁচড়ে চলে গেলাম ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের অভিযোগ কেন্দ্রে। লাগেজের বিশদ বর্ণনা দিলাম এবং ফোন নাম্বার নিয়ে এলাম।


ইউনিভার্সিটির সিনিয়র টিটো ভাইকে আসার সময় এবং প্লেনের টাইম আগেই জানিয়ে রেখেছিলাম। এয়ারপোর্টে তাঁর থাকার কথা। জানা ছিল যে তিনি ট্রেনে আসবেন। তাই রেলস্টেশন খুঁজতে বের হলাম। কিছুক্ষণ পর বুঝলাম, আশে পাশে রেলস্টেশন নেই। সাহায্য নিলাম দুই জার্মান তরুণীর। তাদের দেখানো রাস্তায় আবার এয়ারপোর্টের ভেতরে ঢুকে রেলস্টেশন খুঁজে পেলাম। কিন্তু কোথাও কেউ নেই। কিছুক্ষণ পরপর ট্রেন আসে যায়, কিন্তু কোন বাংলাদেশীকে দেখিনা। এদিকে টিটো ভাইর ফোন নাম্বার সাথে নাই। প্রায় আধা ঘন্টা এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করি, বাদামী চেহারার সবার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকি, কেউই আমার দিকে তাকায় না। শেষ পর্যন্ত এক ভারতীয়ের সাহায্য চাইলাম। তিনি সানন্দে আমাকে নিয়ে গেলেন এক সাইবার ক্যাফেতে, সেখান থেকে উদ্ধার করলাম টিটো ভাইর ফোন নাম্বার, ফোন করে জানালাম যে আমি অপেক্ষা করছি। তিনি ট্রেইনে আসার প্ল্যান বদল করে সাঁজোয়া বাহিনী সহকারে আসার প্ল্যান করেন এবং আমাকে সেটা জানাননি। আমি যখন অভিযোগ কেন্দ্রে, ওনারা তখন আমাকে এয়ারপোর্টে কিছুক্ষণ খুঁজে উলমের দিকে রওয়ানা দিয়েছেন, এই ভেবে যে আমি হয়তো অলরেডি ট্রেনে উঠে গেছি।

কিছুক্ষণ পর বিএমডব্লিউতে চড়ে টিটুভাইসহ তিনজন স্বদেশী হাজির। চড়ে বসলাম গাড়িতে, রবীন্দ্র সংগীত শুনতে শুনতে আর অপরূপা জার্মান প্রকৃতি দেখতে দেখতে অটোবান দিয়ে আমরা রওয়ানা হলাম উলমের উদ্দেশ্যে। যান্ত্রিক সভ্যতার যে জার্মানীর কথা জানতাম, সেখানে মাইলের পর মাইল সবুজ ক্ষেত, মাঝারী পাহাড় আর ধীরলয়ে ঘুরন্ত উইন্ডমিল কি যে বিস্মিত হয়েছিলাম, তা আর বলে বুঝাবার নয়।

No comments: